কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্য উপকারিতা

সুপ্রাচীন কাল থেকেই খাবার হিসেবে ফলের প্রাধান্য সবচেয়ে বেশি। সেই সাথে কিছু ফলের বীজও খাদ্য হিসেবে গণ্য হয় এবং এগুলো সাধারণত ফলের মর্যাদা পেয়ে থাকে। এর মধ্যে বাদাম অন্যতম।বাদামও রয়েছে হরেক রকমের। এর মধ্যে কাঠ বাদাম অন্যতম।

 

কাঠ বাদামের ইতিহাস

 

কাঠ বাদামের বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia catappa ।এটি নিরক্ষীয় অঞ্চলে জন্মানো লেডউড জাতীয় Combretaceae পরিবারের একটি বৃক্ষ।এটি একটি বৃহদাকৃতির গাছের ফলের বীজ।এটি ৩-৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘ হয়ে থাকে। কাঠবাদামের গাছের আদি নিবাস কোথায় তা জানা যায় না। এটি আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া সহ অস্ট্রেলিয়া অবধি উষ্ণ অঞ্চলে জন্মে থাকে। সাম্প্রতিক কালে আমেরিকা মহাদেশেও এই গাছটি বিস্তার লাভ করেছে।

 

কাঠ বাদামের অন্যনাম 

 

কাঠ বাদামকে নানা নামে বিভিন্ন স্থানে ডাকা হয়, যেমন বেঙ্গল আখরোট, সিঙ্গাপুর আখরোট, ইবেলবো, মালাবার আখরোট, নিরক্ষীয় আখরোট, সমুদ্র আখরোট, ছাতা গাছ, আব্রোফো ন্‌কাটি, জানমান্দি ইত্যাদি।এটি সারা বিশ্বে ভারতীয় বাদাম নামেও পরিচিত। 

 

কাঠ বাদামের পুষ্টিগুণ 

 

পুষ্টিকর বিভিন্ন ধরনের ড্রাই ফুডের মধ্যে বাদাম অন্যতম। আর বিভিন্ন ধরনের বাদামের মধ্যে কাঠবাদাম বেশ জনপ্রিয়। কেননা ড্রাই ফুডগুলোর এটির পুষ্টিগুণ সবচেয়ে বেশি। কাঠবাদামে আছে আঁশ বা ফাইবার, উপকারী ফ্যাট, প্রোটিন,মিনারেলস ও ভিটামিন সহ বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্রের Food Data Central(FDC) সাম্প্রতিক একটি তথ্যমতে প্রতি ১ আউন্স(২৮.৪ গ্রাম) পরিমাণ কাঠবাদামের মধ্যে খাবারের পুষ্টি উপাদান নিচে দেওয়া হলো

 

-শক্তি- -১৬৪ ক্যালরি

-শর্করা- ৬.১ গ্রাম

-আঁশ-৩.৫ গ্রাম 

-আমিষ- ৬ গ্রাম

-ফ্যাট- ১৪.২ গ্রাম

-ক্যালসিয়াম- ৭৬.৩ গ্রাম 

-আয়রন- ১ মিলিগ্রাম

-ম্যাগনেসিয়াম- ৭৬.৫ মিলিগ্রাম

-ফসফরাস- ১৩৬ মিলিগ্রাম

-পটাশিয়াম- ২০৮ মিলিগ্রাম

-জিংক- ০.৯ মিলিগ্রাম

-কপার- ০.৩ মিলিগ্রাম

-ম্যাংগানিজ- ০.৬ মিলিগ্রাম

-সেলেনিয়াম- ১.২ মিলিগ্রাম

-ফলিক অ্যাসিড- ১২.৫ মিলিগ্রাম

-ভিটামিন ই- ৭.২ মিলিগ্রাম  

 

কাঠ বাদামের উপকারিতা

 

 কাঠ বাদামে আছে বহু পুষ্টি উপাদান যা শরীরের অনেক সমস্যার কার্যকরী সমাধান। যেমন- 

 

শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়ঃ কাঠ বাদামে আছে প্রচুর পরিমাণে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়। এবং ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়ায়। যা শরীরের জন্য ভালো।

 

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য করেঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কাঠবাদাম পারফেক্ট চয়েজ। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে এবং কাঠবাদাম খেলে ম্যাগনেসিয়ামের পরিমাণ বাড়ায় এবং রক্তে সুগারের লেভেল নিয়ন্ত্রণে থাকে

 

ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেঃ কাঠ বাদাম বডির কোলেস্টেরল শোষণ বন্ধ করতে সক্ষম এবং প্রচুর ওজন হ্রাস করতে কার্যকারী। কারণ বাদামগুলি স্বাভাবিক ভাবেই উচ্চ ক্যালোরি।

 

ক্যান্সার প্রতিরোধ সাহায্য করেঃ কাঠবাদামে রয়েছে বিশেষ ধরনের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট। যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সহায়তা করে। গবেষকরা মনে করছেন কাঠ বাদাম স্তন ক্যান্সারের সুরক্ষা কবজ।

 

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেঃ কাঠ বাদাম এর এক ধরনের আঁশ রয়েছে, যা কোষ্ঠকাঠিন্য রোধ করে।

 

গর্ভস্থ শিশুর জন্মকালীন সমস্যা হ্রাসঃ কাঠবাদাম ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন বি। যা গর্ভস্থ শিশুদের জন্মকালীন সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা কম। তাই গর্ভবতী মায়েদের নিয়মিত কাঠ বাদাম খাওয়া উচিৎ।

 

ভিটামিন ই এর ঘাটতি দূর করেঃ কাঠ বাদাম ভিটামিন ই এর একটি ভালো উৎস। বাদামে প্রোটিন এবং পর্যাপ্ত ভিটামিন ই আপনার স্বাস্থ্য ভালো রাখে। 

 

গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ সাহায্য করেঃ কাঠ বাদামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। যা গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।

 

ত্বকের সমস্যা সমাধান করে কাঠ বাদামে রয়েছে ভিটামিন-সি যা ত্বক সুন্দর রাখতে অতুলনীয়।

 

 চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করেঃ কাঠ বাদামে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন-ডি থাকার ফলে তা আমাদের চুলকে দ্রুত বাড়তে ও মজবুত করতে সাহায্য করে। 

 

স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করেঃ এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-বি, মিনারেলস যা মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়ে স্মৃতিশক্তি প্রখর করে।

 

অবশেষ বলা যায়,সুন্দর স্বাস্থ্যের কাঠ বাদাম খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই নিয়মিত খাবারের তালিকায় নিউট্রিশনে ভরপুর কাঠ বাদাম আজ থেকেই যোগ করুন।

Back to blog

Leave a comment

Please note, comments need to be approved before they are published.